ভূমিকম্পের ভয়, করতে হলে জয়, জানতে হবে ও মানতে হবে।
পৃথিবীতে এখন পর্যমত্ম ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়ার কোনো যন্ত্র আবিস্কার হয়নি: ইন্টারনেট কিংবা অন্য যেকোনো মাধ্যমে অমুক তারিখে অমুক সময়ে ভূমিকম্প হবে, এ জাতীয় অপপ্রচারে বিশ্বাস করার বা আতষ্কগ্রস্থ হওয়ার কোনো কারণ নেই। কোনো ব্যক্তি ভূমিকম্পের পূর্বাভাস এক ঘন্টা আগে দিতে পারলেও তিনি নোবেল প্রাইজ পাওয়ার দাবিদার হতেন।
ভূমিকম্প নিজে মানুষকে আঘাত করে না বরং মানুষের তৈরি দুর্বল ও অপরিকল্পিত স্থাপনা ভেঙ্গে পড়ে বা অসাবধানে রাখা আসবাবপত্র পড়ে গিয়ে মানুষকে আহত-নিহত করে: বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) মেনে ভবন নির্মাণ এবং বিদ্যমান দুর্বল ভবনের ক্ষেত্রে বিশেজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে তা ভূমিকম্প সহনীয় (রেট্রোফিটিং) করতে হবে। ভবনে রক্ষিত হেলে বা ছিটকে পড়ার মতো আসবাবপত্র দেয়ালের সাথে হুক বা অ্যাংগেল দিয়ে আটকে রাখতে হবে। ভারী জিনিসপত্র ওপরের তাকে রাখা যাবে না।
ভূমিকম্পের স্থায়িত্বকাল মাত্র ৩০-৪০ সেকেন্ড হয়ে থাকে: বিপদে ধৈর্যধারণ করতে হবে, বিচলিত হওয়া যাবে না। মাথা স্থির রেখে ও অল্প সমযে যা করতে হবে তার জন্যে প্রয়োজন পূর্ব প্রস্ত্ততি । তাহলেই এ সময়ে ত্বরিত ব্যবস্থা নিয়ে জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে। প্রথমেই নিজের মাথাটাকে সুরক্ষিত রাখার জন্যে হাতের কাছে যা পাওয়া যাবে, যেমন : বালিশ, কম্বল , বই-খাতা, ক্লিপবোর্ড, হাড়ি-পাতিল, ব্রিফকেস, হেলমেট ইত্যাদি কিংবা কিছু না পেলে খালি দু হাত মাথার ওপর দিয়ে পূর্ব নির্ধারিত নিরাপদ স্থানে বসে আশ্রয় নিতে হবে। ২৫-৩০ সেকেন্ডের মধ্যে বেরিয়ে আসা সম্ভব হলে এবং খোলা স্থান থাকলে নিচতলায় বসবাসকারীরা ভূমিকম্প শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রম্নত বাইরে বেরিয়ে আসতে পারেন। নতুবা অন্য তলার বাসিন্দাদের মতো পূর্ব নির্ধারিত নিরাপদ স্থান, যেমন : শক্ত খাট, টেবিলের নিচে, সিঁড়ি ঘরে, রুমের কর্নারে অথবা কলামের পাশের্ব (যেসব স্থানে ভয়েড স্পেস সৃষ্টি হয়) সেখানে বসে আশ্রয় নিতে হবে। জানালার কাছে আশ্রয় নেওয়া এবং লিফট ব্যবহার করা যাবে না।
ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার পর অল্প সময়ের ব্যবধানে পুনরায় এক বা একাধিকবার তুলনামূলকভাবে কম মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে: প্রথম সংঘটিত ভূমিকম্প থেমে যাওয়ার সাথে সাথে পূর্ব নির্ধারিত নিরাপদ খোলা স্থানে আশ্রয় নিতে হবে। তবে লক্ষ রাখতে হবে যে, একই নির্গমন পথে একসঙ্গে সবাই তাড়াহুড়া করে বের হতে গিয়ে কেউ যেন আহত না হন। ক্ষতিগ্রস্থ, আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ বা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পুনরায় প্রবেশ করা যাবে না।
যানবাহনে চলাচলরত অবস্থায় ভূমিকম্প হতে পারে: যানবাহনে চলাচলরত অবস্থায় ভূমিকম্প হলে গাড়ি চালানো যাবে না। রাসত্মার পাশে খোলা স্থান পাওয়া গেলে সেখানে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে গাড়ির মধ্যে বা পাশে অবস্থান নিতে হবে। কোনো উঁচু ভবন, ইলেকট্রিক পিলার, গাছের নিচে বা ব্রিজের ওপরে দাঁড় করানো যাবে না।
ভূমিকম্পে ভবনধ্বস, রাসত্মার ফাটল ইত্যাদির পাশাপাশি গ্যাস, ইলেকট্রিক লাইন, তেলের লাইন ইত্যাদি ফেটে অগ্নি-দুর্ঘটনা সৃষ্টি হতে পারে: অগ্নি-দুর্ঘটনা মোকাবেলার জন্যে জানতে হবে যে, নির্দিষ্ট তাপমাত্রা, অক্সিজেন এবং দাহ্যবস্ত্ত এই তিনটির সমন্বয়ে অগ্নিকান্ড ঘটে। আর এই তিনটির একটি অপসারন করতে পারলেই আগুন নিভে যাবে। যেমন : পানি নিক্ষেপ করে তাপমাত্রা কমাতে পারলে বা ভেজা কম্বল/কাঁথা , বালু দিয়ে আগুনকে আবৃত করে অক্সিজেন বন্ধ করতে পারলে কিংবা অগ্নিকান্ডের আশপাশ থেকে দাহ্যবস্ত্ত সরিয়ে ফেললেই আগুন নিভে যাবে। তেলের আগুনে পানি ব্যবহার করা যাবে না। বৈদ্যুতিক আগুনে দ্রম্নত মেইন সুইচ বন্ধ করতে হবে। শরীরের কাপড়ে আগুন লাগলে কখনও দৌড়ানো যাবে না। তাৎক্ষনাৎ মাটিতে বা ফ্লোরে গড়াগড়ি দিতে হবে। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন রুমে আটকা পড়লে নিচু হয়ে হামাগুড়ি দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব ফায়ার সার্ভিসকে সংবাদ দিতে হবে।
ভূমিকম্পে আটকা পড়লে অমত্মত ৭২ ঘন্টা বেঁচে থাকার চেষ্টা করা যাতে উদ্ধারকর্মীরা আপনাকে জীবিত উদ্ধার করার সুযোগ পান: আপনি কর্মস্থল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা বসতবাড়ি যে স্থাপনায় অবস্থান করুন না কেন তার শক্ত স্থানটি আশ্রয়ের জন্যে চিহ্নিত করে রাখতে হবে এবং ৭২ ঘন্টা বেঁচে থাকার জন্যে আগে থেকেই কিছু উপকরণ সেখানে মজুদ রাখতে হবে। যেমন : শুকনো খাবার, পানি, ব্যাটারি চালিত টর্চ, রেডিও, বাঁশি, প্রদর্শনের জন্য লাল কাপড়, জানালা বা বারান্দা দিয়ে নামার জন্যে দড়ি, প্রাথামিক চিকিৎসার ব্যাগ, ধর্মীয় বই ইত্যাদি পূর্ব থেকেই সংরক্ষণ করতে হবে।মোবাইল ফোন থাকলে তার চার্জ সংরক্ষণের চেষ্টা করতে হবে । তাই এখনই স্পিড ডায়াল ৯ সংখ্যায় ফায়ার ব্রিগেডের নম্বর সংরক্ষণ করুন। রেডিওতে গুরুত্বপূর্ণ সংাবাদ শোনার চেষ্ট করুন । বাঁশি বাজিয়ে মোবাইল ফোনে টর্চের আলো ফেলে বা শক্ত কোনো বস্ত্ত দিয়ে দেয়ালে মেঝেতে বা পাইপ আঘাত দিয়ে শব্দ করে বা লাল কাপড় জানালা বারান্দা দিয়ে বের করে নাড়িয়ে উদ্ধারকর্মীদের আপনার অবস্থান সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করবেন । হাত-পা নড়াচড়া করার সুযোগ থাকলে মাঝে-মধ্যে তা নড়াচড়া করতে হবে। শরীরের কোনো অংশ যদি ভারী কোনো বস্ত্তর নিচে চাপা পড়ে এবং সেটি যদি সরানো সম্ভব না হয় তবে অযথা শক্তি ব্যয় করে ক্লামত্ম হওয়া বা রক্তক্ষরণের শিকার হওয়া সমীচীন হবে না। বিশ্বাস রাখুন আপনি ৭২ ঘন্টা বেঁচে থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা করলে অবশ্যই উদ্ধারকর্মী আপনাকে উদ্ধার করতে সক্ষম হবে।
জনসচেতনতায়, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স নাটোর।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস